বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

সি চিন পিংয়ের মুখোশের আড়ালে কী

নির্মম একটা প্রবাদ আছে, যা চরম দুঃসময়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নির্বিকার থাকাকে নির্দেশ করে। তা হলো ‘রোম যখন পুড়ছিল, সম্রাট নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন’। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রবল প্রাদুর্ভাবের চীনা হর্তাকর্তাদের প্রায় একই অবস্থা।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম যখন রহস্যজনক ভাইরাসের অস্তিত্ব দেখা গেল, তখন কর্তৃপক্ষ তা আমলেই নিল না। উল্টো শুরুতেই যিনি সতর্ক করলেন, তাঁকে চুপ করানো হলো।
অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ থাকে না। উহান শহরে দ্রুত করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। শহর থেকে প্রদেশ। প্রদেশ থেকে পুরো দেশ। তারপর বহির্বিশ্ব।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে প্রথম ব্যক্তির মৃত্যু হয় গত ৯ জানুয়ারি, উহানে। প্রায় এক মাসের মাথায়, ১০ ফেব্রুয়ারি এই ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত মানুষের সংখ্যা এক হাজার ছাড়ায়। আর সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪২ হাজার। মারা যাওয়া ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের সিংহভাগই হুবেই প্রদেশের। চীনের বাইরে অন্তত ২৮টি দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
চীনা কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেছে বটে, তবে দেরি হয়ে গেছে। এ নিয়ে চীনে প্রচণ্ড ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে ১০ ফেব্রুয়ারি এক বিরল দৃশ্য দেখল চীন। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পরিদর্শনে বেরিয়েছেন।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সি রাজধানী বেইজিংয়ের একটি আবাসিক এলাকা, একটি হাসপাতাল ও একটি জেলা রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।
রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি-ভিডিওতে দেখা যায়, পরিদর্শনকালে প্রেসিডেন্ট সি ডিসপোজিবল সার্জিক্যাল মাস্ক পরে আছেন। শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছেন। চিকিৎসাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। করোনাভাইরাস জয় করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।
প্রেক্ষাপট, সময়, স্থান, বেশভূষাসহ নানা দিক ‍বিশ্লেষণ করে সির এই করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পরিদর্শনের ঘটনাকে অনেকেই ‘আইওয়াশ’ বলছেন। ব্যর্থতার জেরে চলমান কঠোর সমালোচনা বন্ধের কৌশল বলছেন।
তা ছাড়া করোনাভাইরাসের ডামাডোলের মধ্যে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়ার বিষয়টি তো আছেই। কেননা, করোনাভাইরাসের দাপটে ইদানীং সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় ঠাঁই হচ্ছিল না সির। সম্প্রচারমাধ্যমের খবরের শুরুতেও তাঁকে দেখা যাচ্ছিল না। চীনে আজীবন ক্ষমতায় থাকার বন্দোবস্ত করা মানুষটির জন্য এই ‘অবহেলা’ নিশ্চয়ই মেনে নেওয়ার মতো নয়।
সমালোচকদের কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে।
চীনে এক মাস ধরে মানুষ মরছে। করোনাভাইরাসের কেন্দ্রস্থল উহান মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। অথচ সেখানে যাওয়ার নাম নেই সির। এত দিন পর তাঁর করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পরিদর্শনের কথা মনে হলো। তাও তিনি পরিদর্শনের জন্য এমন স্থান (বেইজিং) বেছে নিলেন, যেখানকার পরিস্থিতি মারাত্মক নয়।
রাজধানী বেইজিংয়ে করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত কয়েক শ ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর মারা গেছে মাত্র তিনজন। অন্যদিকে, বেইজিং থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে হুবেই প্রদেশে সাড়ে নয় শতাধিক মানুষ মারা গেছে। আক্রান্ত ৩০ হাজারের বেশি।
পরিদর্শনকালে সি যে পোশাক ও মাস্ক পরেছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। হুবেইসহ যেসব এলাকায় করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, সেখানকার অধিবাসী বা চিকিৎসাকর্মীদের বিশেষ মাস্ক ও পোশাক পরতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পরিদর্শনকালে সিকে বিশেষ মাস্ক বা পোশাক পরতে দেখা যায়নি।

পরিদর্শনকালে সি একটি সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক পরে ছিলেন। এই ধরনের মাস্ক সহজলভ্য। আর করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এই মাস্কের কার্যকারিতা নিয়ে খোদ ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকেরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
সি চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। সম্প্রতি তিনি তাঁর ক্ষমতাকে একেবারে পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন। তিনি তাঁর জীবন বা স্বাস্থ্যকে ন্যূনতম ঝুঁকির মধ্যে যে ফেলবেন না, তা চোখ বন্ধ করেই বলা যায়।
তার মানে দাঁড়ায়, সি সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক পরে বেইজিংয়ের যেখানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পরিদর্শনে গেছেন, সেখানে তাঁর জন্য কোনো ঝুঁকিই ছিল না। এই হলো মাস্ক–রহস্য!

কোন মন্তব্য নেই:

Chicago soybean futures fall 1% on lack of details

  Chicago soybean futures fell on disappointment at the lack of concrete details on agricultural purchases from the Trump-Xi meeting. The mo...