সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০২০

৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর



করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব ও উত্তরণের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা
প্রেস কনফারেন্স।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
৫ এপ্রিল ২০২০।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় সাংবাদিক ভাইবোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম।
সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।

করোনাভাইরাসের ঝুঁকি উপেক্ষা করে আপনারা গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশনা অব্যাহত রেখেছেন এজন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি জাতীয় চারনেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহিদ ও সম্ভ্রমহারা দু’লাখ মা-বোনকে।
নভেল করোনাভাইরাস-এর প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে এটিকে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ যাবৎ ২০২টি দেশ ও অঞ্চলে এর সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। বিশ্বে এখন প্রতিদিন ৭০ হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে এবং ৪ হাজারের বেশি মারা যাচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ ৩০ হাজার ৮১৪ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং ৬০ হাজার ১৪৯ মারা গেছেন। ২ লাখ ৩৫ হাজার ৯০২ সুস্থ হয়েছেন।
বাংলাদেশে সময়মত ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে আল্লাহর রহমতে এখনও আমাদের এখানে ব্যাপক সংক্রমণ ঘটেনি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
গত বছর ডিসেম্বর মাসের শেষে চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পরপরই আমরা এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ও আইইডিসিআর যৌথভাবে কাজ শুরু করে। আইইডিসিআর-এ কন্ট্রোল রুম খোলা হয় এবং রোগটি মোকাবিলায় প্রস্তুতি শুরু করা হয়।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পৃথক পৃথক কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
ভাইরাসসহ সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করে ঘধঃরড়হধষ চৎবঢ়ধৎবফহবংং ধহফ জবংঢ়ড়হংব চষধহ ভড়ৎ ঈঙঠওউ-১৯, ইধহমষধফবংয প্রণয়ন করা হয়েছে। পরিকল্পনার আওতায় তিন-স্তর বিশিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়:

ক্স বিদেশ হতে আগত ব্যক্তিদের মাধ্যমে যেন ভাইরাস না ছড়ায় সেজন্য বিদেশে গমন এবং বিদেশ থেকে আগমন নিরুৎসাহিত করা;
ক্স দেশের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমিত ব্যক্তির আগমন ঘটলে দ্রুত সনাক্তকরণ এবং এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ভাইরাসের বিস্তার রোধ;
ক্স চিহ্নিত আক্রান্ত ও অসুস্থ ব্যক্তিদের দ্রুত পৃথক করে যথাযথ চিকিৎসা প্রদান।
গত জানুয়ারি থেকেই এই তিন স্তরের কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়। দেশের সকল বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর এবং স্থলবন্দরে বিদেশ প্রত্যাগত যাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানার ও ইনফ্রারেড থার্মোমিটারের মাধ্যমে স্ক্রিনিং করা হয়।
লক্ষণযুক্ত এবং সন্দেহভাজন যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিমান যাত্রীদের মধ্যে অবতরণের পূর্বেই হেলথ ডিক্লারেশন ফরম ও প্যাসেঞ্জার লোকেটর ফরম বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
লক্ষণবিহীন ও সন্দেহজনক নয় এমন যাত্রীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয় এবং তাদের নিয়মিত ফলোআপ করা হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট বিদেশী সংস্থা, চিকিৎসা পেশার প্রতিনিধি সকলকে নিয়ে জাতীয় কমিটি হয়েছে। বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠিত হয়েছে।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
বাংলাদেশে গতকাল পর্যন্ত ৭০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ও ৮ জন মারা গেছেন। ৩০ জন সুস্থ’ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। যাঁরা মৃত্যূবরণ করেছেন, তাঁদের সবার বয়স সত্তরের উপরে এবং পূর্ব হতেই তাঁরা বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। যদিও একটি মৃত্যূও আমাদের কাম্য নয়।
বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ বিস্তার রোধে বিভিন্ন দেশে লক-ডাউন অথবা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পৃথিবীর প্রায় ১০০টির বেশি দেশে সীমান্ত বন্ধ করার পাশাপাশি প্রায় সকল দেশে আন্তর্জাতিক বিমান অবতরণ স্থগিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশেও গত ২৬ মার্চ থেকে ১৭ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শিল্প কারখানায় আংশিক ছুটি, পর্যটন কেন্দ্র, বিপণীবিতান এবং সড়ক, নৌ, রেলসহ সকল গণপরিবহণ বন্ধ করা হয়েছে এবং জনসাধারণকে ঘরে থাকার ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তার, স্বাস্থ্য পরিসেবার উপর সৃষ্ট বিপুল চাপ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে নজিরবিহীন লকডাউন ও যোগাযোগ স্থবিরতা বিশ্ব অর্থনীতির উপর ইতোমধ্যেই ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। যেসব ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে সেগুলো হচ্ছে:
ক্স শিল্প উৎপাদন, রপ্তানি বাণিজ্য, সেবাখাত বিশেষতঃ পর্যটন, এভিয়েশন ও হসপিটালিটি খাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে ধ্বস নেমেছে।
ক্স শুধু সরবরাহ ক্ষেত্রেই নয়, চাহিদার ক্ষেত্রেও ভোগ ও বিনিয়োগ চাহিদা হ্রাস পেতে শুরু করেছে।
ক্স আইএমএফ ইতোমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা (জবপবংংরড়হ) শুরু হয়েছে মর্মে ঘোষণা করেছে।
ক্স পুঁজি বাজারে বিশ্বব্যাপী বিগত কয়েক সপ্তাহে ২৮-৩৪ শতাংশ দরপতন ঘটেছে।
ক্স ঙঊঈউ (ঙৎমধহরংধঃরড়হ ভড়ৎ ঊপড়হড়সরপ ঈড়-ড়ঢ়বৎধঃরড়হ ধহফ উবাবষড়ঢ়সবহঃ)- এর হিসাব মতে মন্দা প্রলম্বিত হলে বিশ্ব¦ প্রবৃদ্ধি ১.৫ শতাংশে নেমে আসবে।
ক্স বিশ্বব্যাপী বিপুল জনগোষ্ঠী কর্মহীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ক্স মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব এই প্রথম এমন মহামন্দা (এৎবধঃ ফবঢ়ৎবংংরড়হ) পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণে বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর কী ধরনের বা কতটুকু নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা এখনও নির্দিষ্ট করে বলার সময় আসেনি। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব তুলে ধরছি:
ক) আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অর্থবছর শেষে এই হ্রাসের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খ) চলমান মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ব্যাংক সুদের হার হ্রাসের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিলম্বের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
গ) সার্ভিস সেক্টর বিশেষতঃ হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পরিবহন এবং এভিয়েশন সেক্টরের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
ঘ) বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের উপরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
ঙ) বিশ্বব্যাপী জ¦ালানি তেলের চাহিদা হ্রাসের কারণে এর মূল্য ৫০ শতাংশের অধিক হ্রাস পেয়েছে; যার বিরূপ প্রভাব পড়বে প্রবাসী-আয়ের উপর।
চ) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ দশমিক শুন্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে মর্মে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রাক্কলন করেছে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
ছ) দীর্ঘ ছুটি বা কার্যত লক-ডাউনের ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের উৎপাদন বন্ধ এবং পরিবহন সেবা ব্যাহত হওয়ায় স্বল্পআয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস এবং সরবরাহ চেইনে সমস্যা হতে পারে।
জ) চলতি অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হবে। এরফলে অর্থবছর শেষে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
ঝ) বিগত ৩ বছর ধরে ধারাবাহিক ৭ শতাংশের অধিক হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮.১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান চালিকাশক্তি ছিল শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং সহায়ক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি। সামষ্টিক চলকসমূহের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে আমি এখন ৪টি কার্যক্রমের বিষয়ে তুলে ধরছি। তাৎক্ষণিক (রসসবফরধঃব), স্বল্প (ংযড়ৎঃ-ঃবৎস) এবং দীর্ঘ-মেয়াদী (ষড়হম-ঃবৎস)- এ তিন পর্যায়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা একটি কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
(ক) সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা (ওহপৎবধংব ঢ়ঁনষরপ বীঢ়বহফরঃঁৎব): সরকরি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ‘কর্মসৃজনকে’ মূলত প্রাধান্য দেওয়া হবে। বিদেশ ভ্রমণ এবং বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত করা হবে। আমাদের ঋণের স্থিতি-জিডিপি’র অনুপাত অত্যন্ত কম (৩৪%) বিধায় অধিকতর সরকারি ব্যয় সামষ্টিক অর্থনীতির উপর কোনও চাপ সৃষ্টি করবে না।
(খ) আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন (ওহঃৎড়ফঁপব ভরংপধষ ঢ়ধপশধমবং): ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে কতিপয় ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করা হবে। অর্থনৈতিক কর্মকা- পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখাই হলো আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য।
(গ) সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি (ঊীঢ়ধহফ ংড়পরধষ ংধভবঃু হবঃ ঢ়ৎড়মৎধসং): দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমসমূহ হলো:
(১) বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ;
(২) ১০ টাকা কেজি দরে চাউল বিক্রয়;
(৩) লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ;
(৪) ‘বয়স্ক ভাতা’ এবং ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা’ কর্মসূচির আওতা সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করা; এবং
(৫) জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত অন্যতম কার্যক্রম গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণ কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করা; ইত্যাদি।
(ঘ) মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা (ওহপৎবধংব সড়হবু ংঁঢ়ঢ়ষু): অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সিআরআর এবং রেপোর হার কমিয়ে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা আগামীতেও প্রয়োজন অনুযায়ী অব্যাহত থাকবে। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য থাকবে যেন মুদ্রা সরবরাহজনিত কারণে মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আমি এ পর্যায়ে নতুন ৪টি আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল বিষয়সমূহ সংক্ষেপে আপনাদের সামনে তুলে ধরছি:
(ক) ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান: ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ সংশ্লিষ্ট শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল হতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ প্রদান করবে।
এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের সুদের অর্ধেক অর্থাৎ ৪.৫০ শতাংশ ঋণ গ্রহিতা শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৪.৫০ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রদান করবে।
(খ) ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান: ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল হতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ প্রদান করবে।
এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণ গ্রহিতা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রদান করবে।
(গ) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত ইডিএফ (ঊীঢ়ড়ৎঃ উবাবষড়ঢ়সবহঃ ঋঁহফ)- এর সুবিধা বাড়ানো: ইধপশ-ঃড়-নধপশ খঈ- এর আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইডিএফ-এর বর্তমান আকার ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। ফলে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমান অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ইডিএফ তহবিলে যুক্ত হবে। ইডিএফ-এর বর্তমান সুদের হার খওইঙজ + ১.৫ শতাংশ (যা প্রকৃত পক্ষে ২.৭৩%) হতে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে।
(ঘ) চৎব-ংযরঢ়সবহঃ ঈৎবফরঃ জবভরহধহপব ঝপযবসব নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন ঋণ সুবিধা চালু করবে। এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৭ শতাংশ।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আমি ইতঃপূর্বে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন/ভাতা পরিশোধ করার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি আপৎকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলাম। সেটিসহ মোট আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের পরিমাণ হবে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা যা জিডিপি’র প্রায় ২.৫২ শতাংশ।
আমি আশা করি, পূর্বে এবং আজকে ঘোষিত আর্থিক সহায়তার প্যাকেজসমূহ দ্রুত বাস্তবায়িত হলে আমাদের অর্থনীতি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবে এবং আমরা কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছতে পারবো, ইনশাআল্লাহ। সম্ভাব্য এই বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনৈতিক সংকট হতে উত্তরণের জন্য রপ্তানি খাতের পাশাপাশি দেশীয় পণ্যের প্রতি আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমি সকলকে দেশীয় পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে আশ্চর্য এক সহনশীল ক্ষমতা এবং ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যে জাতি মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে - সে জাতিকে কোন কিছুই দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
মহান আল্লাহ বিশ্ববাসীকে এই মহামারী থেকে রক্ষা করুন।
সবাইকে ধন্যবাদ। খোদা হাফেজ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।


কোন মন্তব্য নেই:

In LeBron James' season debut, Lakers storm past Jazz

  November 19 - Luka Doncic scored 37 points with 10 assists and LeBron James added 11 points in 30 minutes of his season debut as the Los A...