বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫

এবার মাহমুদউল্লাহ বিদায়ের ঘোষণা

মুশফিকুর রহিম ওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পর এবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার কথা জানালেন মাহমুদউল্লাহ।

ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে মুশফিকুর রহিমের বিদায়ের রেশ মিলিয়ে না যেতেই দেশের ক্রিকেটে আরেকটি প্রস্থান-পর্ব। এবার অবসরের ঘোষণা দিলেন মাহমুদউল্লাহ। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি আগেই। এবার ওয়ানডে দিয়ে শেষ হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অধ্যায়।

সামাজিক মাধ্যমে বুধবার রাতে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানান ৩৯ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।"সকল প্রশংসা কেবল সর্বশক্তিমান আল্লাহর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি।"

"আমার সব সতীর্থ ও কোচকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমি, বিশেষ ধন্যবাদ ভক্তদের, যারা সবসময় আমার পাশে ছিলেন।"বিদায় বেলায় বাবা-মা ও স্ত্রীর পরিবারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। ছেলেবেলা থেকেই 'কোচ ও মেন্টর' হয়ে পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বড় ভাই এমদাদ উল্লাহর প্রতি।

তার বিদায়ী বার্তায় আছে স্ত্রী-সন্তানদের কথাও।

"...সবশেষে, ধন্যবাদ আমার স্ত্রী ও সন্তানদের, যে কোনো পরিস্থিতিতে সবসময় যারা আমার 'সাপোর্ট সিস্টেম' হয়ে ছিল। আমি জানি, রাইদ ( মাহমুদউল্লাহর ছেলে) আমাকে লাল-সবুজের জার্সিতে মিস করবে।"

এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে দারুণ ফর্মে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ফিফটি করেছিলেন টানা চার ম্যাচে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথম ম্যাচটি খেলতে পারেননি চোটের কারণে। দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নেমে ৪ রান করে তিনি আউট হয়ে যান বাজে শটে। 

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর মুশফিকের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর ভবিষ্যৎ নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছিল। আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপ আড়াই বছর পর। ততদিনে তার বয়স থাকবে ৪২-এর কাছাকাছি।সম্প্রতি বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীনের সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছিল। গত সোমবার বিসিবির এই বছরের কেন্দ্রীয় চুক্তি ঘোষণার সময় জানানো হয়, তিনি নিজে থেকেই বোর্ডকে অনুরোধ করেছিলেন চুক্তিতে না রাখতে। তার ভবিষ্যৎ অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায় তখনই। সেটিরই ধারাবাহিকতা এই আনুষ্ঠানিক বিদায়।

তবে বিদায়টা যে মনের মতো হয়নি, তার বিদায়ী বার্তার শেষদিকে।

"সবকিছুর সমাপ্তি সবসময় নিখুঁত হয় না। তবে 'হ্যাঁ' বলতে হয় এবং সামনে এগিয়ে যেতে হয়। শান্তি... আলহামদুলিল্লাহ।" "আমার দল ও বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য শুভকামনা।"

যে সংস্করণ সবার শেষে ছাড়লেন, সেই ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার পথচলা শুরু হয়েছিল। ২০০৭ বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা সফরে অভিষেক হয় তার। দলে নিয়মিত হয়ে ওঠেন ২০০৮ সালে। বেশির ভাগ সময় ব্যাট করতেন ছয়-সাত-আট নম্বরে। বড় ইনিংস খেলার সুযোগ ততটা পেতেন না। তবে অবদান রাখতেন নিয়মিত। সঙ্গে কার্যকর অফ স্পিন মিলিয়ে দলের ভারসাম্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন।

প্রথমবার ওপরের দিকে ব্যাট করার সুযোগ পান ২০১১ সালে। বিশ্বকাপের ঠিক পর মিরপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে চার নম্বরে নেমে ৬১ বলে অপরাজিত ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন। তবে পরে আবার তাকে নামিয়ে দেওয়া হয় নিচের দিকে। একটা সময় 'ফিনিশারের' ভূমিকায় দলের ভরসা হয়ে ওঠেন তিনি।  ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে আবার চারে তুলে আনা হয় তাকে। সেই সিরিজে ভালো করার পর বিশ্বকাপেও তাকে চারেই রাখা। তার ক্যারিয়ের স্মরণীয়তম সময়টি আসে তখনই। অ্যাডিলেইডে যে ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার-ফাইনাল নিশ্চিত বাংলাদেশ, সেই ম্যাচেই তিনি খেলেন ১০৩ রানের ইনিংস। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরির কীর্তি সেটি। পরের মাচে তার ব্যাট থেকে আরেকটি শতরান আসে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে। 

খুব লম্বা সময় অবশ্য ব্যাটিং অর্ডারে তিন-চারে থাকতে পারেননি। আবার তাকে ছয়-সাতে পাঠিয় দেওয়া হয়। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কার্ডিফে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বিপর্যয়ের মধ্যে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি ও সাকিব আল হাসানের সঙ্গে রেকর্ড জুটি গড়ে দলকে অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দেন তিনি। ওই ম্যাচ জিতে প্রথমবার আইসিসি আসরের সেমি-ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ছিলেন তিনি আরও অনেক দিন। তবে দুঃসময়ও হানা দেয় একসময়। ২০২৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পর জায়গা হারান দলে। ওই বছরের বিশ্বকাপের আগে আবার ফিরে আসেন দলে। বাংলাদেশের চরম হতাশার বিশ্বকাপে ব্যক্তিগতভাবে তিনি ছিলেন সফল। সাত ইনিংসে ৫৪.৬৬ গড়ে রান করেন ৩২৮। একটি সেঞ্চুরি করেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। পরের বছর আবার তার পারফরম্যান্সে ভাটার টান পড়ে। জায়গা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তিনি জবাব দেন টানা চার ফিফটিতে। দবে শেষ পর্যন্ত এই দফায় আর ততটা দীর্ঘ হলো না পথচলা। ২৩৯ ওয়ানডে খেলে চার সেঞ্চুরি ও ৩২ ফিফটিতে ৫ হাজার ৬৮৯ রান নিয়ে শেষ হলো তার ক্যারিয়ার, ব্যাটিং গড় ৩৬.৪৬। হাত ঘুরিয়ে উইকেট নিয়েছেন ৮২টি।

৫০ টেস্ট খেলে ২০২১ সালে টেস্ট থেকে বিদায় নেন তিনি। গত অক্টোবরে ভারত সফর দিয়ে ইতি টানেন ১৪১ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের। এবার ওয়ানডের বিদায় দিয়ে আন্তর্জাতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি।

কোন মন্তব্য নেই:

Chicago soybean futures fall 1% on lack of details

  Chicago soybean futures fell on disappointment at the lack of concrete details on agricultural purchases from the Trump-Xi meeting. The mo...