বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

শেষ পর্যন্ত কিন্তু ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ হবে না

 ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে। সম্প্রতি কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে, আগামী ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ভারত তাদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। যদিও নয়াদিল্লি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে একটি সংঘাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

যদিও এই মুহূর্তে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য দেওয়া কঠিন যে ঠিক কত সংখ্যক সেনা বা সরঞ্জাম মোতায়েন করা হয়েছে, তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, উভয় দেশই সীমান্তে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। কাশ্মীরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

তবে অধিকাংশ বিশ্লেষকই মনে করছেন, একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সম্ভাবনা কম। কারণ উভয় দেশই পরমাণু শক্তিধর এবং একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ উভয় পক্ষের জন্যই বিপর্যয় ডেকে আনবে। তবে সীমিত পরিসরের সংঘাত বা প্রতিশোধমূলক সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ইসলামাবাদ-ভিত্তিক সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ইমতিয়াজ গুল মনে করেন, একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ সম্ভব নয়। কারণ উভয় দেশের পরমাণু অস্ত্র একটি বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের সিনিয়র অ্যানালিস্ট প্রবীণ ধোনথি মনে করেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের উপর প্রত্যাঘাতের ব্যাপক চাপ রয়েছে। তাই সীমিত পরিসরের সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা ২০১৯ সালের বালাকোট স্ট্রাইকের চেয়েও বড় হতে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ এই উত্তেজনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। ইতিমধ্যেই জাতিসংঘ উভয় পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।

বিশ্লেষকদের অনুমান না টিকলে, যদি সত্যিই যুদ্ধ হয়, তবে উভয় পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরাসরি সংঘর্ষে বিপুল সংখ্যক সৈন্য সাধারণ মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। সীমান্ত এলাকার মানুষজন বাস্তুচ্যুত হতে পারে। যুদ্ধের ফলে উভয় দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে। বাণিজ্য বন্ধ হবে, বিনিয়োগ কমে যাবে এবং মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। ভারতের সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তে পাকিস্তানের কৃষি অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।  বিমান হামলা গোলাগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বেসামরিক অবকাঠামোগুলো ধ্বংস হবে। যা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে দুই দেশের জন্যই।

বড় ধরনের পরিবরর্তন আসবে ভূ-রাজনীতিতে। ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুধু এই দুটি দেশের জন্যই নয়। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির জন্য একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে। নষ্ট হবে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা।  এই সংঘাত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে আরও দুর্বল করে দেবে। অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর পুরানো ছোটখাটো সমস্যাগুলো নিয়ে নিয়ে নতুন করে হিসেবের খাতা উল্টাতে দেখা যাবে। ফলে পরস্পরের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। যুদ্ধের ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্ক নতুন করে মেরুকরণ হতে পারে। ইতিমধ্যেই কিছু দেশ উভয় পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছে। আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ নতুন করে মাথাচাড়া দিবে। যুদ্ধের পরিস্থিতি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোকে আরও শক্তিশালী করবে এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ সহজ সরল সমিকরন। যুদ্ধের সময় বড় বড় সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলো তাদের সুবিধামত দেশগুলো পাশে গিয়ে ভিড়বে। ফলে তারা এক প্রকার প্রচ্ছন্নয় আশ্রয় নিশ্চিত করবে। 

উভয় পক্ষের প্রস্তুতি:

ভারতের প্রস্তুতি: হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিরাপত্তা বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটির (CCS) সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তারা কখন, কোথায় এবং কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারবেন। এছাড়া, ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক অবনমন, সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত এবং পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা বাতিল করেছে। আকাশপথেও কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সামরিক মহড়া এবং সীমান্তে সেনা মোতায়েনের খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

·         পাকিস্তানের প্রস্তুতি: পাকিস্তানও তাদের রাডার ব্যবস্থা সীমান্তের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে এবং বিমান প্রতিরক্ষা মহড়া চালাচ্ছে। এছাড়া, নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে (IB) নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দাবি করেছেন, তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে ভারত সামরিক হামলার পরিকল্পনা করছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফও যুদ্ধের আশঙ্কার কথা বলেছেন এবং বলেছেন, অস্তিত্বের সরাসরি হুমকি এলে তারা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবে না।

এক কিছুর পরও বলা যায় একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের সম্ভাবনা কম হলেও সীমিত পরিসরের সংঘাত বা উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। উভয় দেশের নেতৃত্বকে সংযমের পরিচয় দিতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান দুই দেশের জন্যই কল্যাণকর পথ। অন্যথায়, এই সংঘাত শুধু দুটি দেশের জন্যই নয়, সমগ্র অঞ্চলের শান্তি স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে না যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

Chicago soybean futures fall 1% on lack of details

  Chicago soybean futures fell on disappointment at the lack of concrete details on agricultural purchases from the Trump-Xi meeting. The mo...