বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ছয় মাসের মধ্যে দায়িত্ব থেকে মুক্তিচান সুশীলা

 নেপালের অন্তর্বতী সরকারের প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকি দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন বিবিসি নেপালিকে। ছয় মাসের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন, জেন-জির আন্দোলন চলাকালে হত্যা ও সহিংসতার তদন্ত এবং আগের সরকারের ব্যাপক দুর্নীতির তদন্তসহ নানা বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন।

বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সুশীলা কারকির সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো:

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে ২০২৬ এর ৫ মার্চ। সময়মতো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করার ক্ষেত্রে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে?

সুশীলা কারকি: আমি তো বলেছি যে দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করব। আপনি জানেন যে সাধারণ মানুষের দিক থেকে কতটা চাপের মুখে এই সরকার গঠিত হয়েছে। আমি আমার দায়িত্ব ছয় মাসের মধ্যে শেষ করে পদ থেকে সরে যেতে চাই। আগামী কয়েক দিনে নির্বাচন কমিশনকে সক্রিয় করে তুলব আমরা। প্রথমত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে হবে তাদের। একটা পুরনো ভোটার তালিকা আছে, সেটা হালনাগাদ করতে হবে। যদি দিনরাত কাজ করতে পারি তাহলে ছয় মাসে সেটা করা সম্ভব। যেদিন আমি ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেব, সেদিন থেকে আমি মুক্ত।

পত্রিকায় সুশীলা কারকির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খবর পড়ছেন পাঠকরা। সম্প্রতি কাঠমান্ডুতে। ছবি: এএফপি

পত্রিকায় সুশীলা কারকির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খবর পড়ছেন পাঠকরা। সম্প্রতি কাঠমান্ডুতে। ছবি: এএফপি

দুর্নীতির অভিযোগগুলো নিয়ে তদন্ত করার জন্য কোনো কমিশন গঠনের পরিকল্পনা কি আছে আপনার?

সুশীলা কারকি: প্রথমে আমরা ১০-১১ জন সদস্যের একটা মন্ত্রীসভা গড়ব। কয়েকদিনের মধ্যেই এই কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। কী আকারে দুর্নীতি হয়েছে, সেটা আগে জানা প্রয়োজন। আমরা যদি তদন্ত শুরু করতে পারি, পরবর্তী সরকারও সেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পার। আমাদের মনে হয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে যতক্ষণ না তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, ততদিন পর্যন্ত এই জাতি শান্তি পাবে না। আমরা নিশ্চিতভাবেই এটা (দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত) করব।

সম্পত্তি ও প্রাণহানির ঘটনাগুলো তদন্ত করে দেখার জন্য একটা উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কী ধরনের কমিশন হবে এটি? তাদের কতদিন সময় দেওয়া হবে?

সুশীলা কারকি: বর্তমান মন্ত্রীসভায় আমরা মাত্র চারজন সদস্য আছি। আমাদের হাতে সময় আছে ছয় মাস। এই ছয় মাস আমরা যতটা সম্ভব কাজে লাগাতে চাই। আমাদের পরিকল্পনা হল ওই তদন্ত এক মাসের মধ্যে শেষ করার, বা বড়জোর দেড় মাস। বিভিন্ন ক্ষেত্রের তিনজন বিশেষজ্ঞকে দিয়ে এই তদন্ত চালানো হবে।

বিক্ষোভের সময় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় যানবাহন। ছবি: এএফপি

বিক্ষোভের সময় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় যানবাহন। ছবি: এএফপি

মন্ত্রীসভার সম্প্রসারণ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী? কতজন মন্ত্রী থাকবেন? কাদের মন্ত্রী করার কথা ভাবছেন এবং মন্ত্রীসভা সম্প্রসারণের প্রস্তুতি কি শুরু হয়েছে?

সুশীলা কারকি: রাষ্ট্রপতি (রামচন্দ্র পৌডেল) বলেছিলেন যে প্রতিটি রাজনৈতিক দল থেকে একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে মন্ত্রীসভা গঠন করতে। আমি বলি যে এটা অনুচিত হবে। মন্ত্রীসভা অরাজনৈতিক হওয়া উচিত এবং স্বতন্ত্র ব্যক্তিদেরই রাখা উচিত। আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর সদস্যদের, দলিত, নারী ও অনগ্রসর শ্রেণীর সদস্যদের যতটা সম্ভব রাখা যায়, সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। অনেক নাম এসেছে। কিন্তু আমরা এটা যাচাই করে দেখছি যে তারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কি না। যদি তা হয়, তাহলে আমরা তাদের বদলে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের আনার চেষ্টা করব। অথবা প্রাক্তন সচিবদের, আদিবাসী গোষ্ঠী, দলিত, নারী ও অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষদের নিয়ে আসা যেতে পারে।

মন্ত্রীসভায় শুধুই অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা কেন?

সুশীলা কারকি: আমার মনে হয়েছিল যে যদি রাজনৈতিক সদস্যদের বেছে নিই, নির্বাচনের সময়ে এর অপব্যবহার হতে পারে। কারণ নির্বাচনের সময়েও মন্ত্রীসভার হাতে তো কিছু ক্ষমতা থাকবে। যেমন হেলিকপ্টার ব্যবহার ইত্যাদির মতো সুবিধা। আর আমি সেরকম ব্যক্তিই বেছে নিতে চেয়েছিলাম যারা নির্বাচনে লড়াই করবেন না।

গত সোমবার শপথ নেন তিন মন্ত্রী। ছবি: এএফপি

গত সোমবার শপথ নেন তিন মন্ত্রী। ছবি: এএফপি

মন্ত্রীদের কীভাবে বাছাই করা হচ্ছে?

সুশীলা কারকি: আমাদের কিছু বন্ধু আছেন, যারা আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। আমরা তাদের পরামর্শ নিচ্ছি আর মাঠ পর্যায়েও কাজ করছি। আবার ওই ব্যক্তির কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে যে (মন্ত্রীসভায় যোগ দেওয়ার ব্যাপারে) তার সদিচ্ছা আছে কি না। তিনজন সদস্যকে আমরা ইতোমধ্যে নিযুক্ত করেছি। বাকিদের আমরা শিগগিরই চূড়ান্ত করে ফেলব। এটা একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়া। ভারতে টিএন শেষন (ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার) যেভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতেন, সেভাবেই ভোট হওয়া উচিত। প্রতিটি বিষয় আইন আর নিয়ম অনুযায়ী হবে। কোনো ত্রুটি যাতে না থাকে। একটা সুষ্ঠু সরকার গঠিত হোক। আমরা সবাই মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি, যাতে একটি সুষ্ঠু সংসদ গঠন করা যায় (ভোটের পরে)।

সুশীলা কারকির পদত্যাগ দাবিতে গত রোববার বিক্ষোভ সমাবেশ করে হামি নেপাল গ্রুপ। ছবি: সংগৃহীত

সুশীলা কারকির পদত্যাগ দাবিতে গত রোববার বিক্ষোভ সমাবেশ করে হামি নেপাল গ্রুপ। ছবি: সংগৃহীত

নতুন সরকারের দাবি যে গোষ্ঠীটি (জেন-জি) তুলেছিল, ইতোমধ্যেই তারা প্রতিবাদ করছে। আপনিও নিশ্চয় শুনেছেন বিষয়টা। এই পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করার পরিকল্পনা করছেন?

সুশীলা কারকি: হ্যাঁ, সেই গোষ্ঠীটিই তো সরকার গড়ার জন্য আমাদের নাম প্রস্তাব করেছিল। আমরা তো পদ চাইনি। এটা আমাদের সিদ্ধান্তও ছিল না। ৮ সেপ্টেম্বর যখন ছাত্রদের হত্যা করা হলো, আমরা এতটাই মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলাম যে ব্যাপক দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অনিয়ম আর সুশাসনের অভাব নিয়ে ওরা যে দাবিগুলো তুলছিল, সেগুলো পূরণ করতে চেয়েছিলাম। কোনো কিছুতেই তো ১০০ শতাংশ সাফল্য বলে কিছু হয় না। হয়তো আমরা সবগুলো দাবি পূরণ করতে পারব না, কিন্তু আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব। যদি কিছু অপূর্ণ থেকে যায় তাহলে পরবর্তী সরকার আর সংসদ (নির্বাচনের পরে) সেগুলোর দায়িত্ব নেবে।

কোন মন্তব্য নেই:

Chicago soybean futures fall 1% on lack of details

  Chicago soybean futures fell on disappointment at the lack of concrete details on agricultural purchases from the Trump-Xi meeting. The mo...