আমরা এখন ভুবনগ্রামের অধিবাসী। প্রায়ই সংবাদের শিরোনামে দেখা যায়, আমাদের দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মেধাবী তরুণ-তরুণীরাও পড়াশোনা ধাপে ধাপে ক্যারিয়ার গড়ে পৌঁছে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলোতে। ডিজিটাল এই যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, তথ্য প্রযুক্তি আর সহজেই হাতের নাগালে পাওয়া জ্ঞানভাণ্ডারের সাহায্য নিয়ে আপনিও যেতে পারেন সাফল্যের শীর্ষে। এইচএসসি পরীক্ষা শেষে অনেকেই এখন সম্ভাব্য ক্যারিয়ার অপশনগুলো নিয়ে ভাবছেন। তবে এই সময়ে এসে শুধু আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিসিএস আর দুয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেই জীবন ধন্য হয়ে যাবে, একথা ভাবলে চলবে না। যদি আপনি সত্যিই উচ্চাভিলাষী হন, তবে ক্যারিয়ার শুরু করার সময় এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বেতনের ১০টি পেশার কথা না জেনে নেওয়া বোকামি।
দেখুন তো ডেটা সায়েন্স থেকে শুরু করে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং—আপনি কোনটি বেছে নিতে চান? তবে বেতন অনেক কিছুর ওপরে আসলে নির্ভর করে। দেশ, শিল্পখাত, ডিগ্রি আর অভিজ্ঞতা এখানে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। তার মধ্যে সাধারণভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বেতনের কিছু পেশার মধ্যে আছে ডেটা সায়েন্টিস্ট, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, সিইও, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার ইত্যাদি। উচ্চ বেতনের এই চাকরিগুলো আমরা খুঁজতে পারি গ্লোবাল জব সার্চ ওয়েবসাইটে, পেশাগত নেটওয়ার্ক বা রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে। ২০২৫ সালে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি বেতনের চাকরিগুলো একনজরে দেখে নিই চলুন আর কথা না বাড়িয়ে।
১. ডেটা সায়েন্টিস্ট
ডেটা সায়েন্টিস্ট হলেন এমন একজন পেশাজীবী, যিনি পরিসংখ্যান, গণিত, প্রোগ্রামিং ও বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান ব্যবহার করে জটিল তথ্য বিশ্লেষণ ও বোঝেন। তাঁদের লক্ষ্য হলো কোম্পানির ডেটা থেকে মূল্যবান তথ্য ও দিকনির্দেশনা বের করা, যাতে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা: কম্পিউটার সায়েন্স, স্ট্যাটিসটিকস বা গণিতে স্নাতক ডিগ্রি;কোডিং, প্রোগ্রামিং ও মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজে দক্ষতাগড়
বার্ষিক আয় : ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৭৫ ইউএস ডলার
২. সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
এই অভিজ্ঞ সফটওয়্যার ডেভেলপাররা জটিল সফটওয়্যার সিস্টেম তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
যোগ্যতা: কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক ডিগ্রি, একাধিক প্রোগ্রামিং ভাষায় দক্ষতা।
গড় বার্ষিক আয়: ১ লাখ ৯৪ হাজার ২২০ ইউএস ডলার
৩. ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার
কর্পোরেশন বা সরকারের আর্থিক কার্যক্রমে সহায়তা করেন—যেমন মূলধন সংগ্রহ ও অধিগ্রহণ পরিচালনা ইত্যাদি।
যোগ্যতা: ফাইন্যান্স বা ইকোনমিকসে স্নাতক ডিগ্রি, প্রয়োজনীয় লাইসেন্স ও সার্টিফিকেশন (যেমন সিএফএ)।
গড় বার্ষিক আয়:১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৩৩ ইউএস ডলার
৪. প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)
একটি কোম্পানির সর্বোচ্চ পদে থাকা ব্যক্তি, যিনি প্রতিষ্ঠানের মূল সিদ্ধান্ত ও কৌশল নির্ধারণ করেন।
যোগ্যতা: ব্যবসা বা ফাইন্যান্সে স্নাতক ডিগ্রি, এমবিএ থাকলে ভালো।
গড় বার্ষিক আয়: ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৪৭ ইউএস ডলার
৫. কর্পোরেট লয়ার
বড় কোম্পানির আইনি পরামর্শদাতা, যাঁরা ব্যবসা ও চুক্তি সংক্রান্ত আইনি বিষয় দেখেন।
যোগ্যতা: আইন বিষয়ে ডিগ্রি, প্রফেশনাল সার্টিফিকেশন ও অভিজ্ঞতা
গড় বার্ষিক আয়: ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬৮৬ ইউএস ডলার
৬. সার্জন
শল্যচিকিৎসক বা সার্জন রোগীর দেহে অস্ত্রোপচার করেন।
যোগ্যতা: মেডিকেল ডিগ্রি, প্রফেশনার সার্টিফিকেশন ও লাইসেন্স।
গড় বার্ষিক আয়: ২ লাখ ৯৭ হাজার ৩৫৩ ইউএস ডলার
৭. কার্ডিওলজিস্ট
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যিনি হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করেন।
যোগ্যতা: মেডিকেল ডিগ্রি, রেসিডেন্সি ও বোর্ড সার্টিফিকেশন।
গড় বার্ষিক আয়: ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৬০ ইউএস ডলার
৮. পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার
তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের প্রযুক্তির উদ্ভাবন, বাস্তবায়ন ও গবেষণা করেন
যোগ্যতা: পেট্রোলিয়াম বা কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি।
গড় বার্ষিক আয়: ১ লাখ ৩০ হাজার ইউএস ডলার
৯. ক্লাউড ও ইন্টারনেট অব থিংস আর্কিটেক্ট
ক্লাউড সিস্টেম ডিজাইন ও ব্যবস্থাপনায় বিশেষজ্ঞ আইটি পেশাজীবী আর ইন্টারনেট অব থিংস(আই ও টি) সিস্টেম বা স্মার্ট ডিভাইস নেটওয়ার্কের স্থাপত্য তৈরি করেন।
োগ্যতা: কম্পিউটার সায়েন্সে ডিগ্রি, প্রফেশনাল সার্টিফিকেশন।
গড় বার্ষিক আয়: ১ লাখ ৪৪ হাজার ইউএস ডলার
১০. সাইকিয়াট্রিস্ট
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যিনি ওষুধ ও থেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করেন।
যোগ্যতা: মেডিকেল ডিগ্রি ও সাইকিয়াট্রি সম্পর্কিত বিশেষায়িত সার্টিফিকেশন
গড় বার্ষিক আয়: ২ লাখ ৫৫ হাজার ইউএস ডলার
উচ্চ বেতনের চাকরি পেতে হলে লাগে আসলে তিনটি জিনিস —অনুপ্রেরণা, শিক্ষা, আর কঠোর পরিশ্রম। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির নতুন ট্রেন্ড জেনে নিজেকে আপডেট রাখুন, প্রয়োজনে উচ্চতর ডিগ্রি ও সার্টিফিকেশন নিন,আর শিখতে থাকুন। যত বেশি দক্ষ হবেন, তত বেশি মূল্য বাড়বে আপনার সময় ও শ্রমের।
সূত্র: ফোর্বস
ছবি: জেমিনাই এআই








কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন