রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

চট্টগ্রাম আ.লীগে নাছিরবিরোধীদের ঐক্যের ‘ফল’ তুললেন রেজাউল

বর্ষীয়ান নেতা। সারা জীবন দল যা বলেছে, তা–ই শুনেছেন। যে প্রার্থীর পক্ষে খাটতে বলেছে, তাঁর পক্ষেই নির্বাচনে খেটেছেন। এমন তো অনেক নেতাই আছেন। কিন্তু চট্টগ্রামে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে আরেকটি বিষয় কাজ করেছে। আর তা হলো, তিনি চট্টগ্রাম সিটির বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছিরের ‘বিরোধীদের’ একক প্রার্থী হয়ে উঠেছিলেন। নাছিরবিরোধীদের একটাই দাবি ছিল, যা–ই হোক, পরিবর্তন চাই। দলের শীর্ষ নেতৃত্বও পরিবর্তন চাইছিলেন। তাই দ্বিতীয় মেয়াদ আর মেয়র পদে দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন না আওয়ামী লীগের কোনো পদে না থাকা মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় দলের এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এ তথ্য গণমাধ্যমকে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
চট্টগ্রামে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ছিলেন বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, সহসভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসি, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ সালাম, মহানগরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুজিবর রহমান, মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম, মো. ইনসান আলী, মোহাম্মাদ ইউনুস, বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠ ও প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্য জহুর আহমদ চৌধুরীর সন্তান হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফান, প্রাথমিক সদস্য সেলিনা খান, প্রাথমিক সদস্য মোহাম্মদ মনজুর আলম (সাবেক মেয়র), মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেখা আলম চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য এ কে এম বেলায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. মাহাবুবুল আলম, এরশাদুল আমিন, মো. মনোয়ার হোসন ও দীপক কুমার পালিত।
আর সিটির কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন পেতে ৪০৫ জন ফরম সংগ্রহ করেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদক, চট্টগ্রাম সিটির একাধিক মেয়র প্রার্থী, গতকাল মনোনয়ন বোর্ডের সভায় থাকা একাধিক সদস্যের সঙ্গে গতকাল ও আজ রোববার এ প্রতিনিধির কথা হয়। ক্ষমতাসীন মেয়রকে আর প্রার্থী না করাটা সত্যি বিস্ময়কর। এর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে বাদ দেয় আওয়ামী লীগ। খোকনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ব্যর্থতার দায় ছিল। গত বছরের এপ্রিলে ঢাকায় শুরু হয় ডেঙ্গুর প্রকোপ। দক্ষিণ সিটি মশা নিধনে সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। শুধু ব্যর্থতার জন্য নয়, ডেঙ্গুতে যখন একের পর এক প্রাণহানি ঘটছে তখন সিটি মেয়র এ নিয়ে তির্যক মন্তব্য করেন। দক্ষিণ সিটির ভেতরে দুর্নীতির অভিযোগও বিস্তর। খোকন-ঘণিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তিদের এখন দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) ডাকছে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে। আজম নাছিরের বিরুদ্ধে কিন্তু এমন বড় কোনো অভিযোগ নেই। চট্টগ্রামের একটি বড় সমস্যা জলজট। এ সমস্যা সমাধানে তিনি একটি পরিকল্পনাও জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহুর্তে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি পায় চট্টগ্রাম নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এই সিডিএয়ের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের সঙ্গে নাছির বৈরী সম্পর্ক চট্টগ্রামের রাজনীতিতে সবসময় আলোচ্য বিষয় হিসেবে থেকেছে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিপুল ক্ষমতা, নিজস্ব ব্যক্তিত্বের কারণে একাধিক প্রতিষ্ঠানের বৈরীতাকে সামলে নিতেন। যা নাছিরের পক্ষে সম্ভব হয়নি।
চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সিডিএ-সিটি করপোরেশনের মুখোমুখি হয়ে গিয়েছিল। তখন কেন্দ্রও বিষয়টি দেখেছে নেতিবাচকভাবে। আবার সাধারণ মানুষের মধ্যেও এক ধরণের বিতৃষ্ণা তৈরি হয়েছিল। তারা মনে করেছিল, নাছির হয়তো পারছেন না।’
আর এবারের চট্টগ্রাম সিটির মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থী ও রাজনীতি-নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব) এমদাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আ জ ম নাছির অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রতিকূল অবস্থায় বেশি কিছু করতে পারেননি।’
তবে নাছিরের সঙ্গে নিজের কোনো ধরণের বিরোধের কথা অস্বীকার করেন সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিডিএ ও সিটি করপোরেশন দুটো আলাদা প্রতিষ্ঠান। তাদের কর্মপ্রণালি সুনির্দিষ্টভাবে লেখা আছে। এ নিয়ে কোনো বিরোধ নেই।’
এতো কিছুর পরও নাছির বাদ পড়বেন তা হয়তো অনেকেই ভাবেন নি। কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, চট্টগ্রাম নগরে প্রায় একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়ে গিয়েছিল আজম নাছিরের। চট্টগ্রাম রাজনীতির প্রাণপুরুণ, সাবেক সিটি মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী নেই, আখতারুজ্জামান চৌধুরী নেই। ওই দুই নেতার বাইরে এক নিজস্ব বলয় তৈরি করে ফেলেছিলেন নাছির। চট্টগ্রামে যদি একক কোনো নেতা তাঁর বড় সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে দল চালাতে পারেন, তিনি নাছির। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে কোনো দ্বিমত পাওয়া যায়নি। এক সময় মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বলয়ে ছিলেন আজম নাছির। কিন্তু আখতারুজ্জামানের বছর কয়েকের অনুপস্থিতিতে নিজে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান করে ফেলেন। পরে আখতারুজ্জামান ফিরে এলেও নাছিরের এ স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকে। এক সময় যুযুধান প্রতিপক্ষ মহিউদ্দিন ও আখতারুজ্জামান নাছিরের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠেন। দীর্ঘদিন ধরে দলের কোনো বড় পদে না থেকেও হাল ছাড়েন নি নাছির। এর ফল পান ২০১৫ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে। এরপর চট্টগ্রামের রাজনীতির বিভিন্ন বলয়ের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়তে থাকে। সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী, আখতারুজ্জামান চৌধুরীর অনুসারী, আবদুচ ছালাম—এমন সব বলয়ের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের সিটি নির্বাচনকে ঘিরে শাসক দলের পক্ষ থেকে একাধিক জরিপ হয়। সেখানে ব্যক্তি ইমেজের দিক দিয়ে মহিউদ্দিন-তনয় ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর নাম ছিল প্রথমে। মাস দুয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মহিবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয়। তখন সিটিতে ফেরার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলে মহিবুল সেখানে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে থেকে কাজ শেখার আগ্রহের কথা জানান। প্রধানমন্ত্রীও মহিবুলের এ সিদ্ধান্তে সায় দেন। একটি সংস্থার জরিপের ফল ছিল, মহিবুল জনপ্রিয়তার নিরিখে এগিয়ে থাকলেও সাংগঠনিক শক্ত ভিত্তি আছে এবং দলকে সিটির নির্বাচনের মতো বড় নির্বাচনে বিপুল কর্মী বাহিনী নিয়ে লড়তে পারবেন, এসব নিরিখে এগিয়ে ছিলেন নাছির। তবে মহিবুলের সিটিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে নাছিরের এক প্রতিদ্বন্দ্বী চলে যায়। কিন্তু মহিবুলসহ নাছিরবিরোধীদের প্রচেষ্টা ছিল, নাছির বাদে অন্য কেউ আসুক। অন্য কেউ যে আসছে তা গত কয়েকদিন আগে আরও নিশ্চিত হয়। কয়েক দিন আগে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে দেখা করেন।
গত সপ্তাহ খানেক ধরে নাছির ছাড়া একাধিক প্রার্থীর নাম জোরেসোরে উঠেছে, আবার তা মিইয়েও গেছে। যেমন দলবল নিয়ে আবদুচ ছালাম মনোনয়ন নিতে এলে তাঁর মনোনয়ন প্রাপ্তির কথা রটে। হঠাৎ করে মনোনয়ন সারিতে সামিল হন সাবেক মেয়র মঞ্জুরুল আলম। তিনি হঠাৎ কেন এলেন, নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া আসেন নি—এমন কথাও ভাবনায় আসে। এরপর ব্যবসায়ী নেতা ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. মাহাবুবুল আলম মনোনয় নিয়ে আরেক গুঞ্জন শুরু হয়। আওয়ামী লীগ যেভাবে ব্যবসায়ী নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া শুরু করেছে, তাতে মাহবুবের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায়নি। দুই দিন আগে বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠ ও প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্য জহুর আহমদ চৌধুরীর সন্তান ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফানের নাম নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়। শেষ পর্যায়ে খোরশেদ আলম ও রেজাউল করিম চৌধুরীর মধ্যে যে কোনো একজন পাবেন বলে, শোনা যায়। এ দুজনকে নিয়ে নাছিরবিরোধীদের কোনো অনীহা ছিল না। মোট ১৬ জন প্রার্থীকে গতকাল সন্ধ্যায় ডাকেন প্রধানমন্ত্রী।
ওই সাক্ষাতের সময় থাকা প্রার্থীদের তিনজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সবাই মিলে একক প্রার্থী নির্বাচন করলে আমাদের আর বসতেই হতোনা। কিন্তু তা হয়নি।’
এ সময় মনোনয়ন বোর্ডে থাকা দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা বিউটি অব ডেমোক্রেসি।’ তাঁর কথা শেষ হতে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘এটা সাংগঠনিক দুর্বলতারও একটি লক্ষণ।’
প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের প্রতি তাঁর দুর্বলতার কথা বলেন। সিটির উন্নয়নের জন্য তিনি সবসময় উদার থেকেছেন বলে জানান। তাঁরা যে প্রার্থীকের মনোনয়ন দেবেন, তাঁর হয়ে সবাইকে কাজ করতে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি চান প্রার্থীদের কাছে থেকে। সব প্রার্থী একবাক্যে তাদের প্রতিশ্রুতির কথা জানান।
এরপর সব প্রার্থীকে কথা বলতে বলা হয়। এক প্রার্থী চট্টগ্রামে বিপুল সরকারি ব্যয়ের পরও কাঙক্ষিত উন্নয়ন না হওয়ার প্রসঙ্গে তোলেন। মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়া রেজাউল করিম চৌধুরী সাংগঠনিক বিষয়ের পাশে, ভোটের কেন্দ্রগুলো দূরে হওয়ার প্রসঙ্গটি তোলেন।
সকলের কথা শোনার পর মনোনয়ন বোর্ড আবার বসে ফল জানান। আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দল যাকে যোগ্য বিবেচনা করেছে তাঁকেই মনোনয়ন দিয়েছে। বিজয়ী হওয়ার মতো প্রার্থীকেই তো দল মনোনয়ন দেয়।’

নতুন প্রার্থীকে স্বাগত জানিয়েছেন মেয়র আ জ ম নাছির। দলের মনোনয়নে খুশী আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে, ‘রেজাউল করিম চৌধুরী বর্ষীয়ান নেতা। তিনি সব সময় জ্যেষ্ঠ নেতাদের সম্মান করতেন। দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে কখনো দ্বিধা করেন নি। দক্ষ সংগঠক। আর তিনি সবার পছন্দেরও ছিলেন।’
দলীয় প্রার্থীদের সমস্ত বিবেচনার পরও আর যা থাকে তা হলো দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্ত। আর তাঁর মতামতের প্রতিফলনই ঘটে দলীয় মনোনয়নে। সেই মতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সবাই প্রস্তুত বলে জানান আবদুচ ছালাম। তিনি বলেন, ‘দলে প্রতিযোগিতা আছে। থাকবেই। আওয়ামী লীগে অনেক যোগ্য প্রার্থী আছেন। তাদের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছেন তাঁর কথাই মেনে নেব। তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’

কোন মন্তব্য নেই:

In LeBron James' season debut, Lakers storm past Jazz

  November 19 - Luka Doncic scored 37 points with 10 assists and LeBron James added 11 points in 30 minutes of his season debut as the Los A...