সোমবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৫

কী মধু আছে ক্রিকেট বোর্ডে


কী মধু আছে ক্রিকেট বোর্ডে
ছবিটি এআই দিয়ে বানানো

শিরোনামে করা প্রশ্নটি গত কয়েক দিনে অনেকেই আমাকে করেছেন। উত্তর তো দিতেই পারিনি, উল্টো সম্পূরক আরও অনেক প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিয়েছে আমার নিজের মনেই।

সংবাদমাধ্যম আর ফেসবুকে চোখ রেখে অনেকেরই নাকি মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনও জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। পরিচালকের ২৫টি চেয়ারের প্রতিটিই এখানে বেশ লাভজনক। নইলে এই এক নির্বাচন নিয়ে এত দলাদলি, এত সমঝোতার নাটক, মামলা-মোকদ্দমা এবং এত চক্ষু লজ্জা বিসর্জন দেওয়া কেন? নিশ্চয়ই বিসিবির সিন্দুকে অমূল্য ধন–রত্ন আছে। কিন্তু মানুষ বুঝতে পারছে না—কী সেই ধন রত্ন। কী মধু আছে ক্রিকেট বোর্ডে!

বলে রাখা ভালো, বিসিবির পরিচালকদের কোনো মাসিক বেতন বা সম্মানী নেই। শুধু বোর্ড সভায় যোগ দেওয়ার জন্য সম্মানীর ব্যবস্থা থাকে। পরিচালকদের আর্থিক সংগতি বিবেচনা করলে সেটাও অন্তত তাঁদের কাছে খুব বড় কিছু হওয়ার কথা নয়। এ ছাড়া বছরে একবার এজিএমে যোগ দিলে কিছু উপঢৌকন পাওয়া যায়। সে বন্দোবস্ত অবশ্য সব কাউন্সিলরের জন্যই থাকে। এতটুকুই যদি প্রাপ্তি হয়, তাহলে কিসের আশায় বোর্ড পরিচালক হতে এমন কপাল ঠুকে মরা?

যাঁরা বিসিবি নির্বাচনকে সামনে রেখে কয়েক দিন ধরে কোন্দল-দলাদলি করেছেন, তাঁদেরই যদি প্রশ্নটা করা হয়, উত্তর শুনে আপনার মন আনন্দে ভরে যাবে।

বিসিবি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আজ ৬ অক্টোবর
বিসিবি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আজ ৬ অক্টোবর
বিসিবি

সাধারণ ক্রিকেট অনুসারীদের মনের প্রশ্নটা আমি গত কয়েক দিনে কয়েকজন পরিচালক প্রার্থীর কাছে রেখেছি, কিন্তু একটু ঘুরিয়ে। যেমন দু-তিনজনকে জিজ্ঞেস করেছি, আচ্ছা সবাই বিসিবিতে আসতে চাচ্ছে কেন? আগে তো সংগঠক-ক্রিকেটাররা আসতে চাইতেন। এখন দেখি ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, এমন লোকেরাও সেই লাইনে। ঘটনা কী?

শুনে সম্ভাব্য পরিচালকের কণ্ঠেও জেঁকে বসে আমারই প্রশ্ন, ‘আসলেই তো, সবাই কেন ক্রিকেট বোর্ডে আসতে চায়! আমি বুঝলাম না কী মধু আছে ক্রিকেট বোর্ডে।’ এরপর যদি জানতে চান, ‘আচ্ছা আপনি কেন আসতে চাচ্ছেন’, তখন দেখবেন সুর পুরোই অন্য রকম, ‘আরে ভাই, ক্রিকেটটাকে তো বাঁচাতে হবে। আমার নিজের কত কাজ আছে, ব্যবসা আছে। তারপরও ক্রিকেটের স্বার্থে মাঠে পড়ে থাকি। জীবনটা তো ক্রিকেটের পেছনেই দিয়ে দিলাম।’

এ রকম কেউ যে একেবারেই নেই, তা নয়। সে দাবি করলে কিছু মানুষকে বরং অসম্মানই করা হবে। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা থেকেও কেউ কেউ ক্রিকেট বোর্ডে থাকতে চান, থেকেছেন। তাঁরা কিছু কাজও করেন। নইলে নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলো এগোয় কী করে! কিন্তু সে সংখ্যা অতি নগণ্য। তাঁদের বাড়তি প্রাপ্তি সামাজিক মর্যাদা, দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থায় থেকে নামের সঙ্গে ‘বিসিবি পরিচালক’ পরিচয়টা রাখা।

বিসিবি নির্বাচন সামনে রেখে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে
বিসিবি নির্বাচন সামনে রেখে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে
শামসুল হক

তবে ওই ‘আরে ভাই, ক্রিকেটটাকে তো বাঁচাতে হবে...’–জাতীয় কথা শুনলে মনে হতে বাধ্য—এ রকম আরও ১০-১২ জন সংগঠক যদি বাংলাদেশে থাকতেন, দেশের ক্রিকেটের চেহারাই বদলে যেত। মজার ব্যাপার হলো এ রকম কথা বলা সংগঠক দেশের ক্রিকেটে ১০-১২ জন নয়, খুঁজলে আরও অনেকই পাওয়া যাবে। কিন্তু তাঁদের এই নিজেকে বিলিয়ে দেওয়াতে ক্রিকেটের কতটা উন্নতি হয়েছে, সে প্রশ্নের উত্তর হয়তো তাঁদের কাছেও নেই।

তারপরও ধরে নিলাম, ক্রিকেটের কাজটা তাঁরা ক্রীড়াসেবামূলক কাজ হিসেবেই করতে চান। এখান থেকে তাঁদের কোনো প্রাপ্তি নেই, খেলাটাকে শুধু দিয়েই যাচ্ছেন। এবার তাহলে বলুন, মানসিকতার দিক থেকে যাঁরা এ রকম নির্লোভ, যাঁরা শুধু দিতেই জানেন নিতে জানেন না, সেসব মানুষেরা সাধারণত কেমন হন?

সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে এ রকম মানুষ অনেকেই আছেন, যাঁরা নিজের কাজটা নির্বিবাদে করতে চান, কারও সঙ্গে সংঘাতে জড়ানো তাঁদের স্বভাব নয়। কূটচাল-মারপ্যাঁচ তাঁরা বোঝেন না, রাজনীতি বোঝা তো দূরের কথা। একই ভালো কাজ অন্য কেউ করতে চাইলেও কখনো বাধা দেন না। বরং মিলেমিশে তা করতে প্রস্তুত থাকেন।

কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনে আমরা কী দেখি? এমন কিছু লোক ক্রিকেটের জন্য কাজ করতে চান, ক্রিকেটের মঙ্গল চান, ক্রিকেটের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে চান, যাঁদের মধ্যে কোনো মিলমিশ নেই।

তাঁরা এক ঘাটে জল খেতে চান না। শুধু সংঘাত আর সংঘাত। কেউ কাউকে নিয়ে ভালো কথা বলেন না। একে অন্যকে কী করে বিব্রত করবেন আর বিপদে ফেলবেন, সব সময় সেই ছক কষতে ব্যস্ত। ক্রিকেটের সেবা করার মতো মহৎ এক কাজ করতে নেমে রীতিমতো মারামারি করার অবস্থা। অথচ তাঁদের সবার লক্ষ্যই নাকি এক—ক্রিকেটের পাশে থাকা!

বিসিবি কার্যালয়
বিসিবি কার্যালয়
প্রথম আলো

এটা ঠিক যে বিসিবির পরিচালক পদ মাত্র ২৫টি। কাজেই চাইলেও এর বেশি লোক ক্রিকেট বোর্ডে এসে ক্রিকেটের সেবা করার সুযোগ পাবেন না। এবার তো ২৫টি পদের জন্য শুরুতে প্রায় দ্বিগুণ প্রার্থীই ছিলেন।

কিন্তু তাঁরা কেন ক্রিকেট বোর্ডে এসেই ক্রিকেটের সেবা করতে চাইলেন, সেটা এক বিস্ময়। তাঁদের কারও ক্লাব আছে, কেউ জেলা ক্রীড়া সংস্থা অথবা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে আসছেন, অথবা আসছেন অন্য কোনো সংস্থা, প্রতিষ্ঠান থেকে। ক্রিকেটের সেবাটা তো সেখানেও করা যেত। কয়জন করেছেন তা?

নিজ নিজ জায়গায় ক্রিকেটের জন্য কিছুই না করে এমন এক জায়গায় এসে তাঁরা সেটা করতে চাচ্ছেন, যেখানে আগে থেকেই অনেকে আছেন। কাজেই সেই জায়গায় ঢুকতে রীতিমতো যুদ্ধই করতে হয়। গালমন্দ শুনতে এবং দিতেও হয়। তারপরও ক্রিকেট বোর্ডে আসতে হবে, ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক হতে হবে। ক্রিকেটের ‘সেবা’ করে ক্রিকেটের ‘মধু’ খেতে হবে।

একটা সময় ছিল, যখন বছরের পর বছর ফান্ডিং করে, লিগের সময় দল গড়ার টাকা দিয়ে সংগঠকেরা ক্লাবের সঙ্গে থাকতেন। বিনিময়ে সেই ক্লাবের কাউন্সিলর হতেন। সেটার জন্যও নিজেদের মধ্যে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা ছিল। এখন তা–ও লাগে না।

যে বছর নির্বাচন, সে বছরের জন্য একটা মোটা অঙ্ক দিয়ে দিলেই হলো। ধরুন, তৃতীয় বিভাগের একটা দল চালাতে এক মৌসুমে ১৪-১৫ লাখ টাকা লাগে। বিসিবি থেকে লাখ পাঁচেক টাকা অনুদান আসে। ক্ষমতার জোর থাকলে বাকি ১০ লাখ টাকা দিয়ে আপনি হয়ে গেলেন ওই ক্লাবের কাউন্সিলর।

বেশ কিছু ক্লাবের ক্ষেত্রে এবার এটাই হয়েছে। যেসব ক্লাবের ক্ষমতাশালী অতিথি কাউন্সিলররা স্বার্থের লড়াইয়ে হেরে নির্বাচন থেকে সরে গেলেন, সেসব ক্লাবের প্রকৃত সংগঠকেরা এখন চিন্তায় পড়েছেন। ক্ষমতার জোরে টাকা দিয়ে যে অতিথি কাউন্সিলর এসেছিলেন, ক্রিকেট বোর্ডের মধু খেতে না পেরে বিষ হজম করে চলে গিয়ে তিনি তো আর ক্লাবের দায়িত্ব নেবেন না। এখন ক্লাব চলবে কীভাবে?

ক্রিকেটের মানুষ না হয়েও বিসিবিতে আসতে চাওয়ার একটা বড় কারণ গ্ল্যামার। বিসিবি সভাপতি তো বটেই, অনেক সময় একজন পরিচালকও যে পরিমাণ মিডিয়া কাভারেজ পান, সেটা অনেক মন্ত্রীর কপালেও জোটে না। ‘ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক’ পরিচয়টাই তাঁদের নিজ নিজ পরিমণ্ডলে একটা বাড়তি যোগ্যতা হয়ে যায়।

ধরুন, একজন ব্যবসায়ী ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক হলেন। তাঁকে মাঝেমধ্যে টিভিতে দেখায়, তাঁর নাম পত্রিকায় ছাপা হয়। ব্যবসায়ী মহলে সেই পরিচালকের তখন অন্য রকম একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়। তাঁর প্রভাব বাড়ে এবং সেটি নিশ্চিতভাবে তাঁর ব্যবসার মুনাফাতেও প্রভাব ফেলে।

বা ধরুন একজন রাজনীতিবিদ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক হলেন। তাঁর জন্য নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরার এ বিরাট এক সুযোগ। রাজনৈতিক প্রোফাইলের সঙ্গে যুক্ত হয় ক্রিকেট সংগঠকের নতুন পরিচিতি, যেটি তাঁর নিজ দল এবং ব্যালট বাক্সেও প্রভাব ফেলে। এলাকার মানুষ ভাবে, আরে আমাদের এমপি তো ক্রিকেট বোর্ডেও আছেন! বিরাট ব্যাপার।

আবারও বিসিবি সভাপতি হতে যাচ্ছেন আমিনুল ইসলাম।
আবারও বিসিবি সভাপতি হতে যাচ্ছেন আমিনুল ইসলাম।
শামসুল হক

তা এর বাইরে কি বিসিবি পরিচালকের আর কোনো প্রাপ্তি নেই? আছে। নাজমুল হাসানের বিগত বোর্ডে যেমন বিসিবি কর্মকর্তারা বিদেশ ভ্রমণে রেকর্ড করে ফেলেছিলেন। দলের সঙ্গে এক-দুজন পরিচালক তো নিয়মিতই যেতেন, সেটা প্রয়োজনও ছিল কখনো কখনো।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিচালকদের বহর ক্রমেই লম্বা হয়েছে। বাংলাদেশ দলের একই সিরিজ দেখতে দেশ থেকে বিদেশে দু-তিনবার করে আসা-যাওয়ার রেকর্ডও আছে। যেতেন বিজনেস ক্লাসে, থাকতেন পাঁচ তারকা হোটেলে। জীবন যাপনে রাজকীয় স্টাইল। নাজমুল হাসানের শেষের কয়েক বছর তো বিসিবির স্টাফরাও খেলা দেখতে দল বেঁধে বিদেশ যেতে শুরু করেছিলেন।

অনেকে ক্রিকেট বোর্ডে এসে দুর্নীতি করেছেন, টাকার কুমির হয়েছেন—এ রকম অভিযোগ আছে। এবার একটা তদন্তও হচ্ছে এ নিয়ে। কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডে কেউ দুর্নীতি করলেও শাস্তি পাবেন; অতীত অভিজ্ঞতার কারণেই সেটি বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।

অতীতে দেখা গেছে, একটা পক্ষ ক্রিকেট বোর্ডে আছে, আরেকটা পক্ষ বাইরে থেকে দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে। কিন্তু যখন তারা ক্ষমতায় এল, দুর্নীতি নিয়ে আর কথা নেই; কোনো তদন্ত নেই। তখন বাইরে থেকে এত দিন ক্ষমতায় থাকারা দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে থাকেন।

দেখা যাক, এবার সত্যি সত্যি কারও দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসে কি না। নাকি দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ গোপন অস্ত্র হয়েই থেকে যায়। দরকারমতো ভয় দেখাতে পকেট থেকে বের হবে, দরকার শেষে আবার তা পকেটে ঢুকে যাবে।

মৌচাকে ঢিল মেরে মৌমাছি উড়িয়ে লাভ কী! তার চেয়ে মৌচাকটা থাকুক। সময়-সুযোগ এলে যার যার মতো করে মধুটা খেয়ে নিলেই তো হলো!

তারেক মাহমুদ Contributor image
ঢাকাক্রীড়া সম্পাদক, প্রথম আলো

চাঁদাবাজি, দখলের মত নানা অভিযোগ নিয়ে যা বললেন

ঢাকার সমাবেশে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিয়েছেন তারেক রহমানবিবিসি বাংলা: পাঁচই আগস্টের পরে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এরই মধ্যে চাঁদাবাজি বা দখলের মত নানা অভিযোগ এসেছে। আপনাদের দল থেকে অনেককে বহিষ্কার করা হয়েছে এটা ঠিক, আবার একই সাথে এটাও ঠিক যে এই অভিযোগগুলো কিন্তু বারবার আসছে। তো এটা থামানো যাচ্ছে না কেন?

তারেক রহমান: আপনার প্রতি সম্মান রেখে আপনার সাথে এগ্রিও যেমন করবো, আবার এখানে অন্য একটি বিষয় আমি তুলে ধরতে চাইবো।

এর মধ্যে নিশ্চয়ই আপনারা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখেছেন যে প্রায় ৭০০০ এর মতন আমাদের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আমরা কিছু সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কিন্তু এই ৭০০০ এ সবাই কিন্তু আপনি যে অভিযোগ করলেন এই অভিযোগের সাথে জড়িত নয়। এর মধ্যে এমন অনেক বিষয় আছে যারা অন্য সাংগঠনিক বিষয়ের সাথে জড়িত। এটি গেল একটি বিষয়।

দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে আমাদের কাছে এরকম যখন অনেক অভিযোগ এসেছে। আমরা অভিযোগগুলো তদন্ত করেছি। তদন্ত করার পরে আমরা বেশ কিছু বিষয় পেয়েছি।

যেমন আমি দুই-একটি উদাহরণ দিয়ে আপনাকে বলি। যেমন- ধরেন দুই ভাই। কোনও একটি এলাকায় দুই ভাই আছে। দুই ভাইয়ের মধ্যে পারিবারিক সম্পত্তি সহায় সম্পত্তি নিয়ে একটি সমস্যা আছে। এক ভাই বিগত যে স্বৈরাচার পলাতক স্বৈরাচার তাদের কারো সাথে এক ভাইয়ের খুব ভালো সম্পর্ক।

তার ফলে সে সেই স্বৈরাচারের যে দোসর যার সাথে এই এক ভাইয়ের সম্পর্ক, সে তার ইনফ্লুয়েন্সটি ব্যবহার করে অন্য ভাইয়ের সম্পত্তিও জোর করে দখল করে রেখেছে। এখন পাঁচ তারিখের পরে যে ভাই স্বৈরাচারের দোসরকে ব্যবহার করেছিল সেই দোসরও তো পালিয়ে গিয়েছে। তো স্বাভাবিকভাবেই সেই ভাই এখন আর শেল্টার পাচ্ছে না।

তো অন্য যার সম্পত্তি জোর করে রেখে দিয়েছিল অন্য ভাইটি। সেই অন্য ভাইটি স্বাভাবিকভাবে তার হক আদায় করতে গিয়েছে বা হক বুঝে নিতে গিয়েছে। এখন এক্সিডেন্টলি বা ইনসিডেন্টলি যে ভাই এতদিনভাবে বঞ্চিত ছিল সম্পত্তি থেকে সেই ভাই বিএনপি করে। বিএনপির কোনও একজন কর্মী বা স্ট্রং সমর্থক বা নেতা যেটাই হোক। চাপিয়ে দিল অভিযোগ তুলে দিল অন্যজন যে বিএনপি দখল করতে গিয়েছে। এরকম ঘটনা আমরা প্রচুর পেয়েছি।

আবার আরেকটি আমি উদাহরণ দেই যা সত্য, যা বাস্তব। স্বৈরাচারের সময় সারা বাংলাদেশে আমাদের প্রায় ৫০ লাখের বেশি নেতাকর্মীর নামে বিভিন্ন রকম গায়েবি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল।

আমাদের বহু নেতাকর্মী তাদের ঘর বাড়িতে থাকতে পারতো না। তাদেরকে বিভিন্নভাবে পালিয়ে থাকতে হতো। বিভিন্নভাবে সরে থাকতে হতো। এই সুযোগে স্বৈরাচার তাদের ব্যবসা বাণিজ্য দোকান-পাট ঘর বাড়ি জমি জমা পুকুর দখল করে নিয়েছিল। পাঁচ তারিখে যখন স্বৈরাচার পলাতক হয়ে গিয়েছে, পালিয়ে গিয়েছে- তখন স্বৈরাচারের যারা দখল করেছে তারাও সাথে সাথে পালিয়ে গিয়েছে।

স্বাভাবিকভাবেই আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের নিজেদের যেগুলি বৈধ সম্পত্তি, পৈত্রিক সম্পত্তি সেগুলো আবার ফিরে পেতে গিয়েছে। তখন আবার কিছু সংখ্যক লোক প্রচার করেছে যে বিএনপির লোকজন দখল করতে গিয়েছে এরকম ঘটনা প্রচুর ঘটেছে।

আপনি যেই কথাটি বললেন সেরকমও কিছু ঘটেছে। সে কারণেই আমরা আমাদের অবস্থান থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তবে এখানে আমার একটি প্রশ্ন আছে, যে প্রশ্নটি আমরা পাবলিকলিও করেছি। দেখুন আমরা একটি রাজনৈতিক দল। কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমরা অস্বীকার করছি না। ঘটেছে যেমন, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি তাদের বিরুদ্ধে।

যতটুকু আমরা জেনেছি, যতটুকু আমরা তদন্তের পরে পেয়েছি, যখন সত্যতা পেয়েছি, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু পুলিশিং করা তো আমাদের কাজ না। রাজনৈতিক দলের কাজ অবশ্যই পুলিশিং করা না।

আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কখনো বলিনি সরকারকে- যে অমুককে ধরতে পারবে না, তমুককে ধরতে পারবে না, এই করতে পারবে না ওই কথা। আমরা কিন্তু কখনো বলিনি। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে যাদের কাজ পুলিশিং করা তারা কেন তাদের কাজটি করছে না। তারা কেন তাদের কাজে ব্যর্থ এটি আমাদের প্রশ্ন।

বিবিসি বাংলা: তার মানে এখানে সরকারের একটা ব্যর্থতা আছে?

তারেক রহমান: অবশ্যই। আমি তো আগেই বলছি পুলিশিং তো রাজনৈতিক দলের কাজ না পুলিশিং করার দায়িত্ব সরকারের।

বিবিসি বাংলা: অর্থাৎ আমরা ধরে নিতে পারি যে, আপনারা যদি সরকার গঠন করেন সেক্ষেত্রে আপনার দলের নেতাকর্মী বা আপনার দলের নামে কোনও চাঁদাবাজি বা দখল এ ধরনের কিছু কেউ সেটা করতে পারবে না, কারণ তখন যেহেতু আপনারা সরকারে থাকবেন?

তারেক রহমান: ইয়েস, পুলিশ পুলিশের কাজ করবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আইনশৃঙ্খলার কাজ করবে। বিএনপি ইনশাল্লাহ সরকার গঠন করলে আমার দলের কোন নেতাকর্মী তখনও যদি এরকম কোনও অনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত হয় আমরা দলের অবস্থান থেকে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিব।

দল তার পক্ষে থাকবে না, দলের অবস্থান এবং দেশের আইন অনুযায়ী। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব যাদের, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তারা তাদের কাজ করবে, সিম্পল। এখানে দুইয়ে দুইয়ে চারের মতন ব্যাপার।

ঢাকার সমাবেশে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিয়েছেন তারেক রহমান

ছবির উৎস,BNP

ছবির ক্যাপশান,ঢাকার বিভিন্ন সমাবেশে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিয়েছেন তারেক রহমান

দুর্নীতি প্রশ্নে বিএনপি ভোটারদের আশ্বস্ত করবে কিভাবে

 ঢাকার সমাবেশে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিয়েছেন তারেক রহমানবিবিসি বাংলা: বিগত যখন বিএনপি সরকারে ছিল তখন অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল, তার মধ্যে একটা বড় বিষয় ছিল দুর্নীতির অভিযোগ। সরকারে যারা ছিলেন তাদের অনেকের বিরুদ্ধে বা সেই সময় যেভাবে দুর্নীতি হচ্ছিল বিভিন্ন জায়গায়। আপনার নিশ্চয় মনে আছে যে দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে তখন অনেক সমালোচনা হয়েছিল। এ ধরনের পরিস্থিতি যে আর হবে না এ বিষয়ে আপনি ভোটারদেরকে কিভাবে আশ্বস্ত করবেন?

তারেক রহমান: দেখুন আপনি যে কথাটি বললেন দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। ৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ছিল সেই সময়। আমরা ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবরে সরকার নির্বাচনের পর ১০ই অক্টোবর সরকার গঠন করি, সম্ভবত।

এর বোধহয় কিছুদিন পরে একটি সূচক বের হলো টিআইবির। মানে দুই তিন মাস পরে বোধহয় একটি সূচক বের হলো।

নিশ্চয়ই মাত্র নির্বাচিত একটি সরকারের পক্ষে তো ভালোমন্দ কোন কিছুই তিন মাসে করা সম্ভব নয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই যে সূচকটি হয়েছিল সেটি তার আগে আমাদের আগে যে সরকারটি ছিল তারা যে পাঁচ বছর যা করেছে তার উপর ভিত্তি করেই সেই সূচকটি তারা তৈরি করেছে।

আপনি যদি ২০০১ থেকে ২০০৬ অর্থাৎ বিএনপি সরকার গঠন করার পরে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে যখন ক্ষমতা হ্যান্ডওভার করে দিল, আপনি যদি সেই সংস্থা টিএইবি নামক সেই সংস্থাটার রিপোর্টই যদি আপনি দেখেন তাহলে দেখবেন পর্যায়ক্রমিকভাবে, এটি কিন্তু আমার কথা না, এটি তাদের পরিসংখ্যানের কথা- পর্যায়ক্রমিকভাবে কিন্তু নেমে এসেছে।

হ্যাঁ আমি এডমিট করছি পুরাপুরি হয়তো আমরা করতে পারিনি। বাস্তবতা তো বুঝতে হবে। এটি একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। কাজেই এটি মানুষকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে বুঝিয়ে আস্তে আস্তে করতে হবে। জিনিসটি সময় লাগবে।

আমি এখন যত কথাই বলি না কেন বাস্তবতা হচ্ছে এই বিষয়টি যেহেতু সময় লাগবে আমাদেরকে কাজ দিয়ে প্রমাণ করতে হবে।

সেজন্যই আমি ভোটারদেরকে এতটুকু বলতে পারব, আমরা যদি সুযোগ পাই, জনগণ যদি আমাদেরকে সেই সুযোগ দেন, তাহলে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আমরা যাতে একটি এমন অবস্থা তৈরি করতে পারি যেখানে কিছুটা হলেও আমরা বহিঃবিশ্বে বিশ্বের অন্য দেশের সামনে কিছুটা হলেও যাতে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারি।

ভার্চুয়ালি দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যুক্ত হচ্ছেন তারেক রহমান

ছবির উৎস,BNP MEDIA CELL

ছবির ক্যাপশান,ভার্চুয়ালি দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যুক্ত হচ্ছেন তারেক রহমান

বিএনপির অগ্রাধিকার

গত জুনে লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিবিসি বাংলা: একটু আবার নির্বাচনের দিকে যাই। বিএনপি সর্বশেষ সরকারে ছিল ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। এরপর প্রায় ১৯ বছর পরে বিএনপির সামনে আবার একটা সরকার গঠনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই তখনকার যে বিএনপি আর এখনকার যে বিএনপি এই দুটোর পার্থক্যটা আপনি কোথায় কী বলবেন?

তারেক রহমান: এই ১৯ বছরে আমরা বাংলাদেশ বলি বা পুরো বিশ্ব বলি অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়েছে সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে। দুটো বড় বড় জিনিসের বোধহয় পরিবর্তন হয়েছে।

একটি হচ্ছে কোভিডের ভিতর দিয়ে পুরা বিশ্ব গিয়েছে। এই কোভিড বিভিন্নভাবে আমাদের অনেক কিছু চিন্তা ভাবনা মনোজগত চেঞ্জ করেছে। ঠিক একইভাবে যদি আরেকটি বিষয় আমরা দেখি এই যে আপনার সাথে আমি কথা বলছি অনলাইনে, এই যে আইটি বা সোশ্যাল মিডিয়া এই পুরো বিষয়টা কিন্তু মানুষের মনোজগতকে ভিন্নভাবে ভিন্ন রকম করেছে।

অনেক্ষক্ষেত্রে মনোজগতে একটা প্রভাব বিস্তার করেছে। খুব স্বাভাবিকভাবে আপনি যেই সময়ের কথা বলেছেন সেই সময় এই বিষয়গুলো হয়তো সেভাবে ছিল না। তো স্বাভাবিকভাবেই এই সবকিছু বিবেচনা করে সামনের দিনগুলোতে আমাদেরকে এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব রেখে বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে হচ্ছে।

আমরা সেভাবে চিন্তাভাবনা করে আমাদের প্ল্যান প্রোগ্রাম বিষয়গুলোকে আমরা সাজাচ্ছি। সেই সময় থেকে ১৯ বছর আগে আমাদের যেসব প্ল্যান প্রোগ্রাম ছিল, তার থেকে কিছুটা পরিবর্তন হবে।

কিন্তু ওই যে বেসিক যে জিনিসটা সেটা হচ্ছে মানুষের বেটারমেন্ট। মানুষের ভালো কিছু করার জন্য মানুষ যাতে আজকে যেমন আছে আগামীকাল যাতে একটু বেটার থাকতে পারে কি কিভাবে সেটা করা যেতে পারে, কে কোনও শ্রেণি কিভাবে একটু বেটার থাকতে পারে সেটিই থাকবে আমাদের সবচেয়ে প্রায়োরিটি ইস্যু।

গত জুনে লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

ছবির উৎস,CA PRESS WING

ছবির ক্যাপশান,গত জুনে লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

নির্বাচনে খালেদা জিয়ার ভূমিকা কি হবে?

লন্ডনে খালেদা জিয়ার সাথে তারেক রহমানবিবিসি বাংলা: সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আপনাদের দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তিনি কি এ নির্বাচনে কোনও ভূমিকায় থাকবেন? তাকে কি আমরা নির্বাচনে কোনও ভূমিকায় দেখতে পাবো?

তারেক রহমান: আপনি এমন একজন মানুষের কথা বলেছেন, যেই মানুষটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, যতবার গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করা হয়েছে, প্রতিবার উনি অবদান রেখেছেন। সেই গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত বা পুনরুদ্ধার করার জন্য।

এবারও আপনাদের সকলের চোখের সামনেই ঘটেছে যে কীভাবে স্বৈরাচারের সময় তার উপরে অত্যাচারের খড়গহস্ত নেমে আসে। কিন্তু উনি আপোষ করেননি। এরকম একজন ব্যক্তি আজ অসুস্থ। কেন কীভাবে উনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেন, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হলো।

আমরা দেখেছিলাম একজন সুস্থ মানুষ গিয়েছেন। কিন্তু যখন বেরিয়ে এসেছেন একজন অসুস্থ মানুষ বেরিয়ে এসেছেন। তাকে চিকিৎসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। এ সবগুলোই ঘটনা দেশবাসী জানেন। তারপরেও যে মানুষটির এত বড় অবদান রয়েছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার।

আমি সেই দলের একজন কর্মী হিসেবে বিশ্বাস করি বা বিশ্বাস করতে চাই গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যেই প্রত্যাশিত, জনপ্রত্যাশিত যে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, উনার শারীরিক সক্ষমতা যদি এলাও করে উনাকে নিশ্চয়ই উনি কিছু না কিছু ভূমিকা রাখবেন।

বিবিসি বাংলা: সেটা কি নির্বাচনে অংশগ্রহণ হতে পারে?

তারেক রহমান: এটি আমি এখনো বলতে পারছি না। আমি মাত্রই বললাম যে উনার শারীরিক বা ফিজিক্যাল এবিলিটির উপরে বিষয়টি কিছুটা হলেও নির্ভর করছে।

বিবিসি বাংলা: এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন চলে আসে বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে। আপনার বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আপনার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তিনি চার দশক বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখন আপনি কার্যত দলের নেতৃত্বে রয়েছেন আপনি। বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে পরিবারের প্রভাব কতটা থাকবে?

তারেক রহমান: দেখুন বিষয়টিকে আমি একটু তাহলে অন্যভাবে উপস্থাপন করি। সব রকম সকলের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি বলতে চাইছি। দেখুন, একজন চিকিৎসকের সন্তান যখন চিকিৎসক হয় তখন সে ভালোও করে সে খারাপও করে। একজন লয়ারের সন্তানও দেখা যায় যে অনেক সময় বাবা-মায়ের মতন ভালো লয়ার (আইনজীবি) হয় অথবা হয় না।

রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে অনেকের সন্তান পলিটিক্সে এসেছে। সবাই কি ভালো করেছে? সবাই ভালো করেনি। কেউ কেউ করেছে কেউ কেউ করতে পারেনি ভালো।

আপনি যদি আমাকে ইঙ্গিত করে থাকেন, তাহলে এভাবে আমি বলব যে, দেখুন আমরা দেখেছি বাংলাদেশের মতন দেশে রাজনীতি যারা করেন বিগত ১৭ বছরে দেখেছি। তার আগেও আমরা দেখেছি রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে হ্যারাসমেন্টের শিকার হন। মিথ্যে মামলার শিকার হন। আমাদের বহু নেতাকর্মী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। জেল জুলুম খেটেছে। ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যেই কয়টা উদাহরণ দিলাম আমি মাত্র।

আপনি কি বলতে পারবেন এর কোনটার মধ্যে দিয়ে আমি যাইনি? এর প্রতিটার ভেতর দিয়ে আমি গিয়েছি। প্রত্যেকটা স্তর পার করে এসেছি আমি। আমি শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়েছি। যেই নির্যাতনের চিহ্ন এখনো কখনো কখনো আমাকে সহ্য করতে হয়। জেল জুলুম খেটেছি আমি। বিভিন্নভাবে মিথ্যা অপপ্রচারের শিকার হয়েছি আমি। সবকিছুর ভিতর দিয়েই আমি পেরিয়ে এসেছি।

কাজেই এইজন্য এই কথাগুলো আমি বললাম যে রাজনীতি পরিবারকরণ হয় না। এটি সমর্থনের ভিত্তিতে হয়। কাজেই যে অর্গানাইজ করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে সে এগিয়ে যেতে পারবে। কেউ যদি এগিয়ে যেতে না পারে, তাহলে সে এগিয়ে যেতে পারবে না। সময় পরিস্থিতি সবকিছু প্রমাণ করে দিবে।

বিবিসি বাংলা: আপনার স্ত্রী বা কন্যা বা আপনার পরিবারে যারা আছেন তারা রাজনীতিতে আসবেন কিনা এটা নিয়ে কিন্তু ব্যাপক আলোচনা আছে। আলোচনা হয় কিন্তু রাজনীতিতে। তো এ ধরনের কি কোনও সম্ভাবনা আছে বা তারা আগ্রহী কিনা রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে?

তারেক রহমান: আমি ওই যে বললাম সময় পরিস্থিতি বলে দিবে ওটা।

প্রায় ১৭ বছর ধরে লন্ডনে আছেন তারেক রহমান

ছবির উৎস,Bangladesh Nationalist Party-BNP

ছবির ক্যাপশান,প্রায় ১৭ বছর ধরে লন্ডনে আছেন তারেক রহমান

তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী পদের প্রত্যাশী কি না?

প্রায় ১৭ বছর ধরে লন্ডনে আছেন তারেক রহমানবিবিসি বাংলা: নির্বাচন প্রসঙ্গে আপনার কাছে জানতে চাই যে, আগামী নির্বাচনে আপনার ভূমিকা কি হবে আপনি কি সরাসরি নির্বাচন করছেন? আপনাকে কি আমরা প্রধানমন্ত্রী পদের প্রত্যাশী হিসেবে দেখতে পাবো নির্বাচনে?

তারেক রহমান: আমার মনে হয় আপনি প্রথমদিকে বোধহয় একটা প্রশ্ন করেছেন, আমি ওখানে বলেছিলাম স্বাভাবিক আমি একজন রাজনৈতিক দলের সদস্য। একজন রাজনৈতিক কর্মী আমি। নির্বাচনের সাথে তো রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক কর্মীর ওতপ্রোত সম্পর্ক।

কাজেই নির্বাচন যেখানে একটি মানে জনগণের সম্পৃক্ত এরকম একটি নির্বাচন হবে, সেখানে তো অবশ্যই আমি নিজেকে দূরে থাকতে পারবো না। আমাকে আসতেই হবে। স্বাভাবিকভাবেই মাঠেই ইনশআল্লাহ থাকবো আমি। আপনি আপনার প্রশ্নের পরের যে অংশটি ছিল, দেখুন আমি মনে করি এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণের। এটি তো আমার সিদ্ধান্ত না। এটি সিদ্ধান্ত নিবে বাংলাদেশের জনগণ।

বিবিসি বাংলা: কিন্তু আপনি নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত তো আপনাকে নিতে হবে।

তারেক রহমান: না না সেটি তো নিব, কেন নিব না? অবশ্যই নিব।

বিবিসি বাংলা: আপনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাহলে?

তারেক রহমান: জ্বি.. ইনশাআল্লাহ।

বিবিসি বাংলা: অর্থাৎ বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে বা নির্বাচনে অংশ নেয় সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রত্যাশী হিসেবে আমরা তারেক রহমানকে দেখতে পাব সেটা আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি?

তারেক রহমান: এটির সিদ্ধান্ত তো বাংলাদেশের জনগণের।

বিবিসি বাংলা: বিএনপির পক্ষ থেকে?

তারেক রহমান: সে ক্ষেত্রে তো এটি দল সিদ্ধান্ত নেবে। দল কিভাবে করবে এটি তো দলের সিদ্ধান্ত।

লন্ডনে খালেদা জিয়ার সাথে তারেক রহমান

ছবির উৎস,BSS

ছবির ক্যাপশান,লন্ডনে খালেদা জিয়ার সাথে তারেক রহমান

কী মধু আছে ক্রিকেট বোর্ডে

ছবিটি এআই দিয়ে বানানো শিরোনামে করা প্রশ্নটি গত কয়েক দিনে অনেকেই আমাকে করেছেন। উত্তর তো দিতেই পারিনি, উল্টো সম্পূরক আরও অনেক প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি...